প্রাথমিক শিক্ষাকে সর্বজনীন করার পথের সমস্যা(The problem of universalization of primary education )

প্রশ্ন:- প্রাথমিক শিক্ষাকে সর্বজনীন করার পথের সমস্যা গুলি লেখ? 

উঃ - প্রাথমিক শিক্ষা সম্বন্ধে ভারতীয় সংবিধানের ৪৫ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে ৬ থেকে ১৪ বছর বয়সি সব শিশুদের জন্য অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষার কথা। এই শিক্ষা বাধ্যতামূলক এবং 1960 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে রাষ্ট্রকে তা করতে হবে । পরবর্তীতে 1964-1966 তে কোঠারি কমিশন তিনটি বিষয় উল্লেখ করে। জাতীয় শিক্ষানীতিতেও (1986) প্রাথমিক শিক্ষার উপর জোর দেওয়া হয়। ভারতের মহামান্য আদালত শিক্ষাকে মৌলিক অধিকারভুক্ত করার পক্ষে রায় দিলেও বর্তমানে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা সর্বজনীন হওয়ার পথে।


ক. অর্থাভাব :- 
 সর্বজনীন শিক্ষা প্রবর্তনের একটি বড় বাধা হল সরকারি অর্থাভাব । শিক্ষার জন্য অর্থাভাবের অজুহাত সেই ব্রিটিশ যুগ থেকে আজ পর্যন্ত চলে আসছে । আজও এই ব্যয়ের পরিমাণ জাতীয় আয়ের মাত্র ৩ শতাংশ । 

খ. জনসংখ্যা বিস্ফোরণ :- 
 জনসংখ্যা বিস্ফোরণ সর্বজনীন শিক্ষার পথের একটি বড় সমস্যা । প্রতি আদমশুমারিতে দেখা যায় জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে নিরক্ষরতার পরিমাণও বাড়ছে। 

গ. মেয়েদের শিক্ষায় বাধা :- 
 অল্প বয়সে বিয়ে হয়ে যাওয়া , বিভিন্ন সামাজিক কুসংস্কার , ছোট থেকেই সাংসারিক কাজ প্রভৃতি নানা কারণে মেয়েরা শিক্ষা গ্রহণের ন্যূনতম সুযোগটিও পায় না । 

ঘ. দারিদ্রতা ও উদাসীনতা :- 
 কুসংস্কারগ্রস্থ অশিক্ষিত ও দরিদ্র অভিভাবক মেয়েদের ন্যূনতম শিক্ষা দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করে না। 

ঙ. সরকারি উদাসীনতা :- 
রাজ্য স্তরে বাধ্যতামূলক প্রারম্ভিক শিক্ষা আইন পাশ হলেও এই আইন প্রয়োগের দায়িত্ব সরকার গ্রহণ করেনি। 

চ.বিদ্যালয়ের দূরত্ব :- 
আগের তুলনায় বিদ্যালয়ের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও শিশুর সুবিধামত নিকটবর্তী স্থানে প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই । যা সর্বজনীন শিক্ষার একটি বড় সমস্যা । বিশেষ করে বালিকাদের ক্ষেত্রে। 

ছ.বিদ্যালয় পরিকাঠামোগত সুযোগের অভাব:- 
 বিদ্যালয়ের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও পরিকাঠামো গত সুযোগ সুবিধার অভাব সর্বজনীন শিক্ষার পথে অন্যতম বাধা বলে সর্বভারতীয় শিক্ষা সমীক্ষায় বলা হয়েছে। 

অন্যান্য সমস্যা:- 
 ১. প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনুপাতে শিক্ষক ও শ্রেণীকক্ষ কম। 
২. নিম্নমানের শিক্ষণ পদ্ধতি ও নিরানন্দ শিক্ষণ পদ্ধতি। 
৩. বাড়িতে কর্মরত শিশুদের আংশিক সময়ের শিক্ষা ব্যবস্থা নেই। 
৪. আদিবাসীসহ অনগ্রসর শ্রেণীর শিশুদের শিক্ষায় অংশগ্রহণের অনীহা। 
৫. শিখনের কাজে জনগণের অংশগ্রহণ খুবই কম।
 ৬. সর্বজনীন বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষার ব্যাপারে রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব । 
৭. স্থানীয় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে বিদ্যালয়ের কোন যোগাযোগ না থাকা।

0 মন্তব্যসমূহ