মূক ও বধির(Dumb & Deaf) শিশুদের শিক্ষাদানের পদ্ধতি

 


প্রশ্ন:-মূক ও বধির শিশুদের শিক্ষাদানের পদ্ধতি গুলি আলোচনা করো ?
অথবা 
মূক ও বধিরদের জন্য গৃহীত শিক্ষণ পদ্ধতিগুলি আলোচনা করো ?

‌                  # যেসব শিশু কথা বলতে পারেনা তাদের মূক বা বা বোবা  (Dumb)বলে এবং যেসব শিশু শুনতে পায় না, তাদের বধির বা কালা( Deaf) বলে। মূকত্ব ও বধিরত্বের মধ্যে একটি নিবিড় সম্পর্ক বর্তমান । যাদের ডিবি 41 থেকে 80 এর মধ্যে তারা গুরুতর আংশিক বধির এবং যাদের শ্রুতিশক্তি 80 ডিবির উপরে তারা  পূর্ণ বধির । সম্পূর্ণরূপে মূক ও বধির শিশুদের জন্য নিম্নলিখিত শিক্ষাদান পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়-

ওষ্ঠ পঠন বা মৌখিক পদ্ধতি :-

               # বক্তার কথা বলার সময় তার ঠোঁট নড়াচড়া দেখে কথা বা ভাব বুঝতে পারা কে বলা হয় ওষ্ঠ- পঠন বা বাক-পঠন্। মূক ও বধির ছেলেমেয়েরা বক্তার মুখের সামগ্রিক পরিবর্তন, নড়াচড়া ইত্যাদি লক্ষ্য করে বক্তার কথা বোঝার চেষ্টা করে থাকে। পরে একই ভাবে ঠোঁটের সঞ্চালন দেখে তারা ভাষা শিখে থাকে ।এই পদ্ধতির আর এক নাম মৌখিক পদ্ধতি। এই পদ্ধতির প্রবর্তক হলেন জুয়ান পাবলো বনে (Juan Pablo Bonet ).



সঞ্চালন পদ্ধতি বা আঙুলের দ্বারা বানান শেখা:-

               # যেসব শিশুরা সম্পূর্ণরূপে বধির তারা মনের ভাব প্রকাশের জন্য আঙুল সঞ্চালনের সাহায্য নেয়। তাদের এ বিষয়ে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। আঙুল হাতের তালুতে নানাভাবে স্থাপন করে নানাবর্ণ ব্যক্ত করা হয় ।আঙ্গুল সঞ্চালনের মাধ্যমে এই সমস্ত শিশুদের অক্ষর, শব্দ, বাক্য ও বানান লেখা সহজে শেখানো যায়। এই পদ্ধতির প্রবর্তক হলেন শিক্ষাবিদ পেরিয়ার । ভারতবর্ষে এটি করোপল্লবী নামে পরিচিত।

কম্পন ও স্পর্শ পদ্ধতি :-

                # কম্পন ও স্পর্শ পদ্ধতির প্রবর্তক হলেন কেট অ্যালকর্ন ও সোফিয়া অ্যালকর্ন । এই পদ্ধতির মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের শব্দ উচ্চারণের সময় কণ্ঠনালীর উপর হাত এবং মুখে হাত দিয়ে শব্দের কম্পন অনুভূতি উপলব্ধি করতে শেখে। শিক্ষার্থীরা বারবার অনুশীলনের মাধ্যমে ভুলগুলি দূর করে । শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিশুদের এই পদ্ধতিতে শিক্ষাদান করা অত্যন্ত জটিল কাজ।

শ্রবণ সহায়ক পদ্ধতি :-

               # এই পদ্ধতিটি মূলত আংশিকভাবে বধির ছেলে মেয়েদের পড়ানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। উচ্চশক্তিসম্পন্ন শ্রবণসহায়ক যন্ত্রের সাহায্যে আংশিক  বধিরদের বধিরতা অনেকটা দূর করা যায়।

দর্শনভিত্তিক পদ্ধতি :-

              # মূক ও বধির ছেলেমেয়েদের দর্শনভিত্তিক পদ্ধতিতেও মনের ভাব প্রকাশের প্রশিক্ষণ দেয়া হয় । এতে কয়েকটি প্রতীকের ব্যবহার করা হয়। শিক্ষক মহাশয় মূক ও বধির ছেলেমেয়েদের এই সমস্ত প্রতীকের ব্যবহার শিখিয়ে দেন । তারা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে শিক্ষকের মতো মুখভঙ্গি করে শব্দ উচ্চারণ করার চেষ্টা করে এবং ধীরে ধীরে তা আয়ত্ত করে।

‌                      # উপরিউক্ত পদ্ধতি গুলির দ্বারা মূক ও বধিরদের শিক্ষাদান করতে গেলে বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ধৈর্যশীল শিক্ষক-শিক্ষিকার প্রয়োজন হয়। বর্তমানে উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে এই ধরনের ছেলে মেয়েদের ভাষা বিকাশ ও পাঠদানের জন্য গবেষণা চলছে।

0 মন্তব্যসমূহ